
প্রকাশিত: Tue, May 7, 2024 1:49 PM আপডেট: Thu, Jul 3, 2025 11:37 AM
‘আমার কষ্টকে তোমাদের অস্ত্র বানিও না’
কাজী এম. মুর্শেদ : সপ্তাহ দুয়েক ধরে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি ডাইভেস্ট করা। সরকারের জন্য সেটা নেওয়া কঠিন হয়ে পরেছে। এই দুইসপ্তাহে ২৫ রাজ্যের ৬০ এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১০০ ছাত্রছাত্রী গ্রেফতার হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, শিক্ষকরাও এর মাঝে আছে। আপনারা সম্ভবত পুরো ব্যাপারটা জানেন, তারপরও যারা বুঝতে চান সহজ করে বলি। ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি কি দাবি তুলেছে, প্যালেস্টাইন রাজ্যের স্বীকৃতির জন্য? না, সেটা করে নাই। তারা যুদ্ধ বন্ধ চাইছে? সেটা আংশিকভাবে চাইছে। তারা মূলত যা চাইছে তা হলো ডাইভেস্ট করা। আমেরিকার বড় ইউনিভার্সিটিগুলোর খরচ অনেক, তারা দান পায় অনেক বিত্তবানের কাছ থেকে। একটা ইউনিভার্সিটি চালাবার খরচ অনেক, তার মধ্যে অনেককে স্কলারশিপ দেওয়া হয়, রিসার্চে অনেক অর্থ ব্যয় হয় এবং তারা আমেরিকার সরকারের কাছ থেকে কোনো অর্থ সাহায্য পায় না। তাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন নাই।
এই যে টিউশন ফি, দান, রিসার্চ সহায়তা, এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় সেটা ব্যাংকে ফেলে রাখলে ২.৫% হারে সুদ পাবে, সেজন্য এই অর্থ, যারা অফিশিয়াল নাম এনডাওমেন্ট ফান্ড, সেটা শেয়ারবাজারে লাভজনক কোম্পানিগুলোতে ইনভেস্ট করে। যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ইনভেস্ট করা, তাদের বেশির ভাগই সরাসরি ইসরায়েল যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহকারী অথবা ইসরায়েল যে সব এলাকা প্যালেস্টাইন থেকে দখল করছে তার কাঠামোগত উন্নয়নে খরচ করছে। ছাত্রছাত্রীদের দাবি হলো, যেসব কোম্পানির শেয়ারবাজারে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করা, সেখান থেকে তুলে অন্য কোম্পানিতে ডাইভেস্ট করা। তারা চায় না তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে ইসরায়েল শক্তিশালী হয়ে নিরাপরাধ প্যালেস্টাইনিদের উপর জেনোসাইড চালাবে। এইটা কি খুব অন্যায্য কোনো দাবি? আমার মনে হয় না। এটাকে ইসলামের সাথে জড়ানো বা ইহুদী-বিরুদ্ধ বানানো আমেরিকা সরকারের ভুল। বাইডেন এখনি ৪৫-৫৫ পপুলারিটিতে ট্রাম্পের পিছনে আছে। তরুন ডেমোক্রেটরা এই এক ইস্যুতে ভোট টানতে পারছে না।
অর্থের কথা বলতে পারেন, একটু ধারণা দিই। বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার, শুধু হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এনডাওমেন্ট ফান্ড ৫০ বিলিয়ন ডলার। দুইদিন আগে আমেরিকার লোয়ার হাউজে আইন পাস করা হয়েছে। এটা এখন সিনেটে আছে। সিনেটে পাস হলে রাষ্ট্রপতির সই হলে আইন হয়ে দাঁড়াবে। লোয়ার হাউজ বা হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে ৩২০-৯১ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পাস হয়। বিলটা নিয়ে বলি, এটাও বলে রাখি দুইদিন আগে পাস হওয়া এই বিলের কারণ মূলত ছাত্রছাত্রীদের দাবি। আমেরিকার পত্রপত্রিকাগুলো যেভাবে বলছে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, এটা একদমই বানোয়াট। শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের সংঘর্ষে যায়নি, পুলিশ একতরফা আক্রমণ করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিলটায় মূলত ডেফিনিশন যা ছিলো সেটা বদলানো হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল হলোকস্ট রিমেমবারেন্স এ্যালাইয়েন্স (ওঐজঅ), টাইটেল ৪, সিভিল রাইটস এ্যাক্ট, ১৯৬৪।
পূর্বের সংজ্ঞা বা ডেফিনেশন ছিলো- “ধ পবৎঃধরহ ঢ়বৎপবঢ়ঃরড়হ ড়ভ ঔবংি, যিরপয সধু নব বীঢ়ৎবংংবফ ধং যধঃৎবফ ঃড়ধিৎফ ঔবংি. জযবঃড়ৎরপধষ ধহফ ঢ়যুংরপধষ সধহরভবংঃধঃরড়হং ড়ভ ধহঃর-ঝবসরঃরংস ধৎব ফরৎবপঃবফ ঃড়ধিৎফ ঔবরিংয ড়ৎ হড়হ-ঔবরিংয রহফরারফঁধষং ধহফ/ড়ৎ ঃযবরৎ ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু, ঃড়ধিৎফ ঔবরিংয পড়সসঁহরঃু রহংঃরঃঁঃরড়হং ধহফ ৎবষরমরড়ঁং ভধপরষরঃরবং”. নূতন আইনে যুক্ত করা হয়েছে “ঃধৎমবঃরহম ড়ভ ঃযব ংঃধঃব ড়ভ ওংৎধবষ, পড়হপবরাবফ ধং ধ ঔবরিংয পড়ষষবপঃরারঃু” এই বিলের মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্রকে পুরোপুরি ইহুদি কমিউনিটির অংশ ধরা হয়েছে। এই আইন পাস হলে আপনি ইসরাইলের ব্যাপারে কোনো কথা বললেও সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। আমেরিকার ফার্স্ট এ্যামেন্ডমেন্ট ছিলো, বাকস্বাধীনতা।
আপনার বাক রহিত করার ব্যবস্থা এই আইনে করে রেখেছে। ইসরায়েলের বিপক্ষে বলা মানে হলোকস্ট নিয়ে বলা এবং এ্যান্টি সেমিটিজমের বিপক্ষে যাওয়া। আন্দোলন হয়তো কিছু দমন হয়েছে, কারণ সোমবার থেকে পুলিশ পাহারায় ক্লাস শুরু হবে। পরীক্ষা চলবে, আন্দোলন করা যাবে না। এই আন্দোলন কতোটা ছড়িয়ে পরেছে বলেছি, সেটা এখন ইউরোপেও ছড়িয়ে পরছে। কয়দিন আগে আমেরিকায় অবস্থানরত ইহুদীরা হোয়াইট হাউসে বিশাল মিছিল করে, তারা দুইটা কথার ওপর জোর দিয়েছিলো ‘নট ইন আওয়ার নেইম’ বা আমাদের নামে না। অন্যটা হলো ‘মাই গ্রিফ ইজ নট ইওর উইপন’ বা আমার কষ্টকে তোমাদের অস্ত্র বানিও না। লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
